১৫,০০০ টাকা বেতনের মধ্যে খরচ ও সঞ্চয়ের বাস্তবসম্মত কৌশল
বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ১৫,০০০ টাকা বেতনে সংসার চালানো এবং সেখান থেকে সঞ্চয় করা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু অসম্ভব নয়। সঞ্চয় বিষয়টি আয়ের পরিমাণের চেয়ে 'আর্থিক ব্যবস্থাপনার' ওপর বেশি নির্ভর করে। কঠোর আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বেতনের মধ্যেও প্রতি মাসে অন্তত ১০০০-২০০০ টাকা জমানো সম্ভব।
নিচে ১৫,০০০ টাকা বেতনের মধ্যে খরচ সামলে সঞ্চয় করার একটি বাস্তবসম্মত গাইডলাইন দেওয়া হলো:
১. আবাসন ও খাওয়ার খরচ নিয়ন্ত্রণ: আপনার আয়ের সবচেয়ে বড় অংশটি যায় বাসা ভাড়ায়। একা থাকলে ফ্ল্যাট ভাড়া না নিয়ে মেস বা সাবলেট পদ্ধতিতে থাকুন। চেষ্টা করুন বাসা ভাড়ার খরচ যেন কোনোভাবেই ৩,০০০ টাকার বেশি না হয়।
খাবার: বাইরের হোটেল বা রেস্তোরাঁ পরিহার করুন। অফিসে দুপুরের খাবার বাসা থেকে নিয়ে যান। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং মাসে অন্তত ১,৫০০-২,০০০ টাকা সাশ্রয় হবে।
২. যাতায়াত ও ছোটখাটো খরচ: রিকশা বা সিএনজির পরিবর্তে লোকাল বাস বা পায়ে হাঁটার অভ্যাস করুন। স্বল্প দূরত্বের রাস্তায় হাঁটলে শরীর ভালো থাকে এবং ভাড়াও বাঁচে। প্রতিদিনের যাতায়াত খরচ ও মোবাইল বিলের জন্য একটি ফিক্সড বাজেট (যেমন: ২,০০০ টাকা) আলাদা করে রাখুন।
৩. 'আগে সঞ্চয়, পরে খরচ' নীতি: বেতন পাওয়ার পর খরচ করার শেষে যা বাঁচে তা জমানোর চিন্তা করবেন না। বরং বেতন পাওয়ার সাথে সাথেই ১,০০০ বা ২০০০ টাকার একটি ডিপিএস (DPS) বা সেভিংস ফান্ডে টাকাটি সরিয়ে ফেলুন। মনে করুন আপনার বেতন আসলে ১৩,০০০/১৪,০০০ টাকা। এই মানসিকতা তৈরি করতে পারলে সঞ্চয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।
৪. বদভ্যাস ও বিলাসিতা ত্যাগ: ধূমপান বা হুটহাট দামী গিফট দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে। মাসে ১০০০ টাকার অপ্রয়োজনীয় খরচ কমালে বছরে সেটি ১২,০০০ টাকার সঞ্চয়ে পরিণত হয়।
৫. অপ্রয়োজনীয় খরচ পরিহার (Self-Audit): কোনো জিনিস ক্রয় করার আগে নিজেকে নিচের ৩টি প্রশ্ন করুন:
- আমি কি এটা ছাড়া বাঁচতে পারি না?
- আমার বর্তমান আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী এটা কেনা কি ঠিক হবে?
- আমি কি সত্যিই এটি ব্যবহার করব?
নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করার পর দেখবেন জিনিসটি যদি সত্যি প্রয়োজনীয় হয়, কেবল তখনই আপনি ক্রয় করুন। তাছাড়া ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। এই মানসিক ফিল্টারটি ব্যবহার করলে মাস শেষে আপনার অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ বেঁচে যাবে।
উপসংহার:১৫,০০০ টাকায় হয়তো আপনি রাজকীয় জীবনযাপন করতে পারবেন না, কিন্তু হিসাবী হলে বিপদের সময়ের জন্য একটি তহবিল গঠন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, বিন্দু বিন্দু জলেই সিন্ধু হয়।

Comments
Post a Comment